দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরের বাম শাসনে ২৩ বছর ধরে ব্রু রিয়াং শরনার্থীদের সমস্যা সমাধান করা হয় নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই দীর্ঘ পুরনো সমস্যা সমাধান হয়েছে। সেই সঙ্গে শরনার্থীদের সুষ্ঠু পুনর্বাসনে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। রবিবার ধলাই জেলার আমবাসা মহকুমায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে একাধিক উন্নয়নমুলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে প্রায় ৬৬৮.৩৯ কোটি টাকার ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও ৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আমরা এখানে দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরের বামফ্রন্ট শাসন দেখেছি। অথচ দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে এখানে ব্রু রিয়াং শরণার্থীরা কি দুর্বিষহ অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করেছেন। আমাদের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যশস্বী গৃহমন্ত্রী অমিত শাহের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই দীর্ঘ পুরনো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। এজন্য আমি এখানে উপস্থিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। আর এই সমস্যা নিরসনের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা রাজ্যের ১২টি জায়গায় ব্রু রিয়াং শরনার্থীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছি। এরমধ্যে ১১টি জায়গায় কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বাকি শান্তিরবাজার এলাকায় কাজও সম্পন্ন হওয়ার পথে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার, ত্রিপুরা সরকার, মিজোরাম সরকার ও ব্রু রিয়াং শরণার্থী প্রতিনিধিদের মধ্যে চুক্তিতে যা যা লেখা হয়েছিল সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা যা বলেছেন সেটাই করছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এখন পর্যন্ত ১,৭৫৪ একর জমি বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে মোট ৬,৯৩৫ পরিবারকে এখন পর্যন্ত পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। যেখানে ৩৭, ৫৮৪ জন রয়েছেন। বিদ্যুত সংযোগ থেকে শুরু করে ইট সলিং রাস্তা, পরিশ্রুত পানীয়জলের জন্য ডিপ টিউবওয়েল, রেশনশপ, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, স্কুল, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র সমস্ত ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদানের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এখানে প্রথমে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ের কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এখন পর্যন্ত ৮২১.৯৮ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এজন্য আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানাই এবং তাঁকে ত্রিপুরায় আসার জন্য স্বাগত জানাই। তাঁর হাত ধরে আজ ৬৬৮ কোটি টাকার অধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। উল্লেখ্য, এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত ধরে উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে – ধলাই জেলার ব্রুহাপাড়াতে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এস বি স্কুল, ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে হেলথ এবং ওয়েলনেস সেন্টার, ১৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাজার শেড, ৪ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ধলাই জেলার বিরাশি মাইল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নতুন ভবন, ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত উল্টাছড়াতে হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার এবং আগরতলা আখাউড়া রোডে স্মার্ট সিটি প্রকল্পে ২৫ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট (এসটিপি)।
এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগরতলায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেন্ট্রাল ডিটেকটিভ ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, ১২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আমবাসায় মহকুমা শাসকের নতুন অফিস বিল্ডিং, ১৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গন্ডাতুইসায় মহকুমা হাসপাতাল, ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জিরানিয়ায় অ্যাপ্রোচ রোড-সহ ২টি রেলওয়ে ওভারব্রিজ, ৪০ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে খোয়াই-এর পদ্মবিল আরডি ব্লকের অধীন দেবেন্দ্র চৌধুরী পাড়া (বেলছড়া) থেকে ছনখলা পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, ১১টি শহরে ৮৮ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট (এস টি পি) নির্মাণ এবং আগরতলায় ৩১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ কিলোমিটার প্রধান রাস্তার উন্নতিকরণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, সাংসদ কৃতি সিং দেববর্মা, বিধায়ক চিত্তরঞ্জন দেববর্মা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন, রাজ্যের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, রাজস্ব দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে, ধলাই জেলার জেলাশাসক সাজু ওয়াহিদ সহ কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ।