ত্রিপুরা রাজ্যে আরো ৭৪১টি বহুমুখী প্যাক্স এবং ২১৯টি দুগ্ধ, মৎস্য সমবায় সমিতি গঠন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রাজ্য সরকার। এতে কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন আরো শক্তিশালী হবে। এছাড়াও সমবায় সমিতিগুলির জন্য আয়কর ছাড়ের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। রবিবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে সমবায় সম্মেলন-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ত্রিপুরাতে জিএসডিপি এখন পর্যন্ত ৮.৯% বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, মাথাপিছু আয় ২০২৪ এ ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭৭৩ টাকা হয়েছে যা গত বছর ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩৬৪ টাকা ছিল। ২০১২ এর সাথে তুলনা করলে প্রায় দ্বিগুণ জিএসডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে ত্রিপুরায়। কিন্তু এখানে বসে থাকলে হবে না। উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তাই এখন আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে। বিশেষ করে সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের। এই সমবায়কে সামনে রেখে জিএসডিপি এবং মাথাপিছু আয় অবশ্যই বৃদ্ধি করতে হবে। আর সেটা করতে হবে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সঙ্গে একটা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। আজকের এই আয়োজনের মাধ্যমে আগামীদিনের রূপরেখা ও দিশা নির্দেশিকা চয়ন করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিতে হবে। এতে সমবায়ের প্রতি মানুষ আরো আকৃষ্ট হবে এবং প্রগতির সাথে একাত্ম হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কারণে আজ ফাইভ ট্রিলিয়ন অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে। সেটাকে বেশি করতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর প্রতিটি রাজ্য এগিয়ে আসলে সেটা সম্ভব হবে। তবেই দেশের অর্থনীতি আরো এগিয়ে যাবে। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো সমবায় মন্ত্রক গঠন করায় আমি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এতে বিকশিত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্য পূরণ হবে। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ভিসিতে অন্তত একটি করে প্যাক্স দুগ্ধ ও মৎস্য সমবায় সমিতি গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরা রাজ্যে আরো ৭৪১টি বহুমুখী প্যাক্স গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের। আগামী ৫ বছরের জন্য মোট ২১৯টি দুগ্ধ, মৎস্য সমবায় সমিতি গঠন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এতে কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ অর্থনীতির আর্থ সামাজিক উন্নয়ন শক্তিশালী হবে। ল্যাম্পস ও প্যাক্সগুলিতে কম্পিউটার ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থাদি করা হয়েছে। সব ধরণের সমবায়কে জাতীয় ডেটাবেসে আনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে প্রতিটি সমবায়ের স্ট্যাটাস সহ সমস্ত বিষয়াদি জানা যাবে। ল্যাম্পস ও প্যাক্সগুলির ই- পরিষেবা যাতে ভালোভাবে প্রদান করা যায় এজন্য সিএইচসি বা কমন সার্ভিস সেন্টারকে সমবায়ের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে। এলপিজি সরবরাহ, পেট্রোল ও ডিজেল খোলার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগ কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে।
জেনেরিক মেডিসিন সরবরাহ করার অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে তাদের। প্রধানমন্ত্রী কৃষক সমৃদ্ধি কেন্দ্রকে উন্নত করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। রপ্তানি ক্ষেত্র, প্রত্যায়িত বীজ, জৈব চাষের ক্ষেত্রে নতুন মাল্টি স্টেট কো অপারেটিভ সোসাইটি গঠন করার চিন্তাভাবনা নেওয়া হয়েছে। সমবায় সমিতিগুলিকে সমৃদ্ধ করার জন্য আয়কর ছাড় দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। ত্রিপুরা সমবায় সমিতিগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্য সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সমবায়ের মাধ্যমে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এজন্য কেন্দ্রীয় গৃহ ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনের সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, সমবায় দপ্তরের মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, কেন্দ্রীয় সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আশিষ কুমার ভুটানী, রাজ্যের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা সহ অন্যান্যরা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে আগত পরিচালক মন্ডলীর সদস্য/সদস্যা, শীর্ষ সমবায়ের কর্মকর্তাগণ, কৃষি ভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে আগত কর্মকর্তাগণ, সমবায় সমিতির বিভিন্নস্তরের কর্মচারি, সমবায় দপ্তর এবং রাজ্য সরকারের অন্যান্য দপ্তরের আধিকারিকগণ।