বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখতে রাজ্যে আসবে রিলায়েন্স টিম: মুখ্যমন্ত্রী

বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে খুব সহসাই রাজ্যে আসবে রিলায়েন্স গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের একটি টিম। আর জনজাতি অংশের জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক উত্থানে কাজ করছে ভারতীয় জনতা পার্টি। রাজ্যের ঐক্য, সংহতি রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। সোমবার এডিসির সদর কার্যালয় খুমুলুঙে আয়োজিত জনজাতি একতা সন্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। ভারতীয় জনতা পার্টির মান্দাই ও টাকারজলা মন্ডলের যৌথ উদ্যোগে এই একতা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, সম্প্রতি আমি মুম্বাই গিয়ে রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুকেশ আম্বানির সাথে দেখা করেছি, ত্রিপুরায় আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। কারণ আমাদের রাজ্যে পর্যটন শিল্প এবং বাঁশ ভিত্তিক শিল্প সহ প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমি তাঁর সাথে প্রায় ৪৫ মিনিট আলোচনা করেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেন যে খুব শীঘ্রই একটি টিম রাজ্য সফরে আসবে। এছাড়াও আমরা রাজ্যের আইটিআইগুলিকে আপগ্রেড করার জন্য টাটা গ্রুপের সাথে একটি মৌ স্বাক্ষর করেছি। এই আইটিআইগুলি বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত ছিল। কিন্তু এখন টাটা গ্রুপ এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধুনিকীকরণের জন্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।

                    মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজকের সম্মেলনে বিপুল সংখ্যায় মানুষের উপস্থিতি দেখে তিনি আপ্লুত, অভিভূত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপর আস্থা রয়েছে মানুষের। আগে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের চারদিকে শুধু উগ্রবাদ ছিল। তারা মূলস্রোত থেকে চলে গিয়ে অন্যদিকে ধাবিত হয়েছে। এতে নিজেদের জীবন যেমন নষ্ট হয়েছে তেমনি পরিবারের জীবনও নষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে গোটা অঞ্চলের ক্ষতি হয়েছে। সেই জায়গায় ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর ধীরে ধীরে উত্তর পূর্বাঞ্চলের পরিবর্তন হয়েছে। শান্তি শৃঙ্খলা সম্প্রীতি ছাড়া কোনকিছু সম্ভব নয়। আর সেটা প্রধানমন্ত্রী বুঝেছেন। এজন্য অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি চালু করেছেন তিনি। প্রায় ১১/১২টির মতো চুক্তি হয়েছে এই অঞ্চলে। ২০২৪ এর ৪ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে এটিটিএফ ও এনএলএফটির সঙ্গে অনুষ্ঠিত চুক্তির সময়ে আমি সহ কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহও ছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে সেখানে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরমধ্য দিয়ে ত্রিপুরা এখন সন্ত্রাসবাদ মুক্ত রাজ্যে পরিণত হয়েছে। সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের হিরা মডেল দিয়েছেন। এবার কেন্দ্রীয় সরকার চুরাইবাড়ি থেকে চন্দ্রপুর পর্যন্ত চার লেনের জাতীয় সড়কের জন্য মঞ্জুরি দিয়েছে। সারা দেশের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ইন্টারনেট ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিয়েছেন। এখন ত্রিপুরা থেকে অত্যাধুনিক মানের এক্সপ্রেস ট্রেন পরিষেবা পাওয়া যায়। এয়ারওয়েজের ক্ষেত্রেও প্রভূত উন্নতি হয়েছে রাজ্যে। এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হিরা মডেলের জন্য। আমরা জানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে সিঙ্গারবিল এয়ারপোর্ট তৈরি করেছিলেন মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুর। এতদিন তাঁকে সম্মান দেওয়ার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আগের সরকার কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের সরকার আসার পর আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার হিসেবে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের নামে এয়ারপোর্টের নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৯ আগস্ট মহারাজার জন্মদিনকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

                                 মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, এডিসির নাম তিপ্রা টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল করার জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। এর পাশাপাশি ১৯টি জনজাতি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এডিসিতে যাতে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন এজন্য এডিসির আসন সংখ্যা ২৮টি থেকে বেরিয়ে ৫০টি করতে রাজ্য মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্তক্রমে দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। জনজাতি অধ্যুষিত ১২টি ব্লককে এসপিরেশন্যাল ব্লক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরমানে এসব এলাকার উন্নয়নে বাজেটের ৮/১০ শতাংশ অধিক বরাদ্দ ব্যয় করা হয়। ব্রু রিয়াং শরনার্থীদের দীর্ঘ ২৩ বছরের সমস্যা সমাধান করার জন্য শুধু কুম্ভীরাশ্রু আমরা দেখেছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন তারাও তো আমাদেরই লোক। তাই তাদের জন্য কিছু করতে হবে। এরপর ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি ভারত সরকার, ত্রিপুরা সরকার, মিজোরাম সরকার ও ব্রু শরনার্থীদের মধ্যে একটা ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিভিন্ন জায়গায় তাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার অধিক রাখা হয়েছে। এর নাম হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি। এর নাম হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ।  মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সাল থেকে পরপর ৭ জনকে পদ্মভূষণ সম্মান দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সকলেই জনজাতি সম্প্রদায়ের। কারণ ভারতীয় জনতা পার্টি সম্মান দিতে জানে। ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্য থেকে নিয়ে তেলেঙ্গানা রাজ্যের মতো বড় রাজ্যে রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে রাজ পরিবারের যিষ্ণু দেববর্মাকে। আর সেটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের কারণে। রাজ্যের জনজাতিদের ককবরক ভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে বড়মুড়া পাহাড়ের নাম হাথাইকথর রেখেছি আমরা। এরআগে ৩৫ বছরে কেউ রাখে নি। আমরা কংগ্রেসকে দেখেছি, সিপিএমকে দেখেছি। জনজাতিদের যত দাবিয়ে রাখা যায়, অসম্মান করা যায় সেটা করেছে তারা। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার জনজাতিদের সার্বিক কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করছে। এদিন সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, প্রাক্তন সাংসদ রেবতি ত্রিপুরা, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক বিপিন দেববর্মা, এডিসি সদস্য বিদ্যুৎ দেববর্মা, এডিসি সদস্য সঞ্জীব রিয়াং সহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *