আগর রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতীক। আগর চাষ এ রাজ্যের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথেও জড়িয়ে আছে। আজ আগরতলার হোটেল পলো টাওয়ারে ত্রিপুরা বন দপ্তর আয়োজিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক আগর উড কনক্লেভ এবং আগরভিত্তিক ক্রেতা বিক্রেতা সম্মেলনের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। উল্লেখ্য, এই সম্মেলন আগামী ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত চলবে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগরতলার নামাকরণের সাথে আগর গাছের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই আগর থেকেই আগরতলা নামের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন। রাজ্যিক গাছ হিসেবে আগর আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। জীবিকা নির্বাহেও রাজ্যের হাজার হাজার পরিবারকে সাহায্য করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগর শিল্প ক্ষেত্রে মহিলাদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথকে সুগম করে তুলছে। রাজ্যে বৃহৎ পরিসরে আগর চাষ এবং তার প্রক্রিয়াকরণের প্রসারে ২০২১ সালে ত্রিপুরা আগর উড পলিসি গ্রহণ করা হয়। এই নীতির ফলে আগামী ৪-৫ বছরে রাজ্যে আগর ভিত্তিক অর্থনীতি ২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে। তাছাড়াও রাজ্যে আতর, ধূপ, আগরবাতি মশলা, প্রিমিয়াম ধুপকাঠি উৎপাদনের মাধ্যমে আগর ক্ষেত্রের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে সম্প্রসারিত করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা সরকারের প্রচেষ্টায় ভারত সরকারের বিভিন্ন দপ্তর আগর রপ্তানীকে সহজতর করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই আগর উড সেক্টারের উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্যের জনগণের আর্থসামাজিক মান উন্নয়ন ঘটবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বাজারে আগরভিত্তিক শিল্পের উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কনক্লেভ ও ক্রেতা বিক্রেতা সম্মেলন রাজ্যে আগরভিত্তিক অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করবে। এই কনক্লেভে বিভিন্ন অর্থপূর্ণ আলোচনা, যৌথ প্রচেষ্টা ও উদ্ভাবনী বিষয় আন্তর্জাতিক বাজারে রাজ্যের আগরকে তুলে ধরার পথকে আরও প্রসারিত করবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামী দিনে ত্রিপুরা আগর চাষ ও বাণিজ্যে গ্লোবাল হাবে পরিণত হবে।
অনুষ্ঠানে বনমন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা বলেন, আগর আগামীদিনে ত্রিপুরার ভবিষ্যতের হীরা হবে। আগর আমাদের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা নিতে পারে। আগর শিল্পের সাথে যুক্ত ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে তোলার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। বনমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন আগামীদিনে আগর চাষের ক্ষেত্রে রাজ্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মচিত হবে। অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন রাজ্যের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বন দপ্তরের প্রধান সচিব তথা প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক আর কে সামাল। এছাড়াও ত্রিপুরা জাইকা (স্ক্যাটফর্ম প্রজেক্ট)’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক ও প্রকল্প অধিকর্তা পি এল আগরওয়াল, নর্থ ইস্ট কাউন্সিলের কনফেডারেশান অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য সঞ্জয় গাড়ওয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে এনসিই’র অধিকর্তা প্রসাদরাও ভাদ্দারাপু আগর উড ক্ষেত্রে ত্রিপুরার উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বন দপ্তরের এনটিএফপি সেন্টার অব এক্সিলেন্সের প্রকাশিত দুটি বইয়ের আবরণ উন্মোচন সহ রাজ্যে উৎপাদিত আগর উড সামগ্রীর সূচনা করেন। তাছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে আগর উড সামগ্রী প্রদর্শনীর স্টলগুলি পরিদর্শন করেন। তিনদিন ব্যাপী এই কনক্লেভ ও ক্রেতা বিক্রেতা সম্মেলনে দেশ বিদেশের ক্রেতা-বিক্রেতা ও উদ্যোগপতিগণ অংশ নিয়েছেন।