ভরের রহস্যের সন্ধানী পিটার হিগস প্রয়াত হলেন

মহাবিশ্বের এক মহা-রহস্যের উত্তর খুঁজেছিলেন তিনি। বলেছিলেন এমন কোনও এক বিশেষ কণার কথা, যা পদার্থকে ভর জোগায়। তাঁর সেই তত্ত্বই তাঁকে এনে দিয়েছিল পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার। তবে ব্রিটিশ পদার্থবিদ পিটার হিগস ঘোর বিরোধী ছিলেন কণাটিকে শুধুমাত্র তাঁর নামে চিহ্নিত করা নিয়ে। কারণ, বিশ্বের আরও পাঁচ বিজ্ঞানী তাঁর মতোই পদার্থের ভরের রহস্য খুঁজেছিলেন । অবশ্য পদার্থবিদ হিগসই বিশেষ কণার কথা প্রথম বলেছিলেন। আর তাই তাঁর আপত্তি সত্ত্বেও সেই কণার বৈজ্ঞানিক নাম করা হয়েছিল হিগস-বোসন। আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামও এই ‘বোসন’-এ জুড়ে রয়েছে।

গত কাল ৯৪ বছর বয়সে স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় প্রয়াত হয়েছেন পদার্থবিদ পিটার হিগস। প্রায় পাঁচ দশক ধরে তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এক বিবৃতি দিয়ে হিগসের প্রয়াণের খবর জানিয়ে বলেছে, সামান্য অসুস্থতার পরেই নিজের বাসভবনে মারা গিয়েছেন এই অসাধারণ শিক্ষক। তিনি কয়েক প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের কাছে অনুপ্রেরণা ।

ব্রহ্মাণ্ডের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল ভর। কণার ভর না থাকলে তা আলোর বেগে ছুটে বেড়াত ।ভর না থাকলে গ্রহ-নক্ষত্র থেকে শুরু করে গাছপালা, নদীনালা এমনকি মানুষও থাকত না। কিন্তু এই ভরের উৎস কি? এরই উত্তর খুঁজতে গিয়ে ১৯৬৪ সালে হিগস  এমন এক কণার অস্তিত্ব অনুমান করেছিলেন, যা আসলে ভরের উৎস। ২০০৮ সালে জেনিভার কাছে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজ়েশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ তাদের গবেষণাগারে টানা চার বছর ধরে এই ধরনের কণারই খোঁজ চালায়। ২০১২ সালে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে আলোর বেগে ধাবমান বিপরীতমুখী প্রোটন কণার সংঘর্ষ ঘটিয়ে পাওয়া যায় একটি নতুন কণার চিহ্ন। হিগসের এই তত্ত্বের জন্যই ২০১৩ সালে হিগস এবং বেলজিয়ান পদার্থবিদ ফ্রঁসোয়া এনগ্লেয়ার্ট  নোবেল পুরস্কার পান। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমির মতে, ব্রহ্মাণ্ডের মূল সূত্রটি হল এক বিশেষ ধরনের কণার অস্তিত্বের। সেই কণার উৎস একটি অদৃশ্য ক্ষেত্র এবং সেই ক্ষেত্রের সংস্পর্শেই তৈরি হয় কণার ভর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *